খুব সহজে গর্ভধারণের পদ্ধতি ও মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান হয়

 



আসসালামু আলাইকুম 

পোস্টটি পড়ে যা জানতে পারবেন -

- কি করে আপনারা গর্ভধারণের উপযুক্ত সময় বেছে নেবেন,

- মাসিকের সময় কি করে শরীরের তাপমাত্রা মাপার মাধ্যমে গর্ভধারণের উপযুক্ত সময় বের করবেন,

- স্ট্যান্ডার্ড ডেইজ কি?

- ক্যালেন্ডার মেথড পদ্ধতির মাধ্যমে কিভাবে গর্ভধারণের উপযুক্ত সময় বেছে নেবেন,


বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মেয়েদের গর্ভধারণ নিয়ে একটি বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এটির প্রধান কারণ হলো মেয়েরা বিবাহের পরে বিভিন্ন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যার কারণে মেয়েরা গর্ভধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। (How many days after my period can I get pregnant)

যে সকল পদ্ধতি মেনে চললে খুব সহজে একটি মেয়ে সন্তান লাভ করবে তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো-


প্রথম পদ্ধতি

প্রতিমাসে মেয়েদের সাদাস্রাব এর চারটি অবস্থা দেখা যায়। প্রথম প্রকারের অবস্থায় সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ থাকে। তার পরের দুই ধরনের অবস্থায় সম্ভাবনা একটু করে বাড়তে থাকে। চতুর্থ অবস্থায় যে ধরনের স্রাব আসে যেটাতে সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। (How can I easily get pregnant)

এখন চার ধরনের সাদা স্রাব কিভাবে চিনতে পারবেন? আসুন জেনে নেই-

১. প্রথম অবস্থা- এ অবস্থায় মাসিকের ঠিক পরে কোন সাদা স্রাব যায় না। মাসিকের রাস্তা খুব শুকনো অবস্থায় থাকে। তখন সন্তান ধারণের ক্ষমতা প্রায় ০.০০ অথবা  ০.৩ শতাংশ  থাকে।


২. দ্বিতীয় অবস্থা- এই সময় যোনিপথে হালকা ভেজা ভেজা মনে হয়। কিন্তু আপনি এই স্রাব চোখে দেখতে পারেন না ও হাতদিয়ে ধরতে পারবেন না।


৩. তৃতীয় অবস্থা- এটি সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এ অবস্থায় ঘন স্রাব হয় সেটি আঙুলের সাথে আঠালো ভাবে লেগে থাকে। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে আড়াই শতাংশ আসে।


৪. চতুর্থ অবস্থা- এই অবস্থায় সাদা স্রাব একেবারে পাতলা ও পিচ্ছিল হয় কাঁচা ডিমের সাদা অংশের মতো। এটি আঙ্গুল দিয়ে বড় করা যায় ভাঙ্গে না। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা একেবারে বেড়ে যায় ২৮ দশমিক ৬  শতাংশ প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে। 

এই চতুর্থ ধাপ শেষ হবার পর সাদাস্রাব আবার ঘন আঠালো হয়ে যায়। মাসিকের আগে আগে পাতলা স্রাব যেতে পারে। কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে প্রকৃত গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাহলে করনীয় কি?

 তৃতীয় অবস্থা যখন শুরু হবে তখন থেকেই চেষ্টা শুরু করে দিবেন এবং চতুর্থ অবস্থা যখন শেষ হবে তার তিনদিন পর পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।


দ্বিতীয় পদ্ধতি

মাসিকের সময়ে ও মাসিকের পর পর শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বেরোয় তখন একটি নারীর  শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। সাধারণত বোঝা যায় না কারণ খুব সামান্য পরিমাণে বাড়ে ০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আপনি যদি প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থাকেন তাহলে কখন বেড়ে গেল সেটি আপনি ধরতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি এটা মনে রাখবেন টানা ছয় দিন কম তাপমাত্রার পরের তিনদিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। তাই যে বেশি তাপমাত্রা শুরু হলো শুরু হওয়ার তিন দিন পর্যন্ত  ফার্টাল উইন্ডো থাকে। তাপমাত্রা যতদিন পর্যন্ত থাক তিন দিন পর কিন্তু ফার্টাল উইন্ডো শেষ।

কিছু নিয়ম মেনে তাপমাত্রা মাপতে হবে। যখন তখন মাপলে হবে না। তাপমাত্রা মাপার নিয়ম গুলো হলো-

-ঘুম থেকে উঠে কোন কিছু করার আগে বিছানায় থাকা অবস্থাতেই তাপমাত্রা মাপবেন,

-প্রতিদিন একই সময়ে চেষ্টা করবেন,

-আমরা অনেকেই বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপি এটা করলে হবেনা মুখের তাপমাত্রা মাপতে হবে,

- জ্বর মাপার থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে এত সূক্ষ্ম বিষয় বোঝা যাবেনা ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করবেন। এই থার্মোমিটার সাধারণত শুরুর সময় বোঝা যায় না তবে কখন শেষ হবে সেটা বোঝা যাবে। 


যেকারণে মাসের একটা সময়ে গিয়ে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা এত বেশি বেড়ে যায়

 একটা নারীর শরীরে ডিম্বাশয় থাকে। প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে যায় তখন সেটি খোলস ভেঙে উপর থেকে বের হয়ে আসে এ ঘটনাকে আমরা ডিম ফুটে বের হয়ে আসা বলি। যে ডিম্বাণুটি বের হয়ে আসলো সেটি তখন সন্তান ধারণে সক্ষম।

 ফ্যালোপিয়ান টিউব টিউবনালিতে যদি পুরুষের শুক্রাণু আগে থেকে এসে বসে থাকে তাহলে সেটা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় আর ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন হলে তবে তা গর্ভধারণর সম্ভব।

 যদি শুক্রাণু মিলিত না হয় ডিম্বাণু একা একা জরায়ুতে এসে পৌঁছায় তাহলে তার কদিন পরে জরায়ু তার গায়ের মোটা প্রলেপ ঝেড়ে ফেলে সেখান থেকে দূষিত পদার্থটি তরল আকারে বের হয়। এই ঘটনাকে আমরা বাইরে থেকে মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে থাকি। 

নারীর দেহে পুরুষের শুক্রাণু তিন দিন বাঁচে। কিছু ক্ষেত্রে সাতদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কিন্তু, একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু থাকে ২৪ ঘণ্টা। তার মানে ডিম্বাণু খুব অল্প সময়ের জন্য থাকে তাই ডিম্বাণু যে কয় ঘন্টা আছে সেই সময়টা আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে না হলে গর্ভধারণ হবেনা। ডিম্বাণু বের হওয়ার কয়েক দিন আগে যদি সহবাস করা হয় তাহলে ডিম্বাণু ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকার সম্ভাবনা বাড়ে আর এ কয়েকটা দিন কে বলে ফার্টাল উইন্ডো


তৃতীয় পদ্ধতি

 স্ট্যান্ডার্ড ডেইজ: এ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন যদি আপনার মাসিক নিয়মিত হয়।  কাটায় কাটায় এক মাস হবে না। তা না হয়ে যদি ২৬  থেকে ৩০ দিন পর পর মাসিক হয় তাহলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। এ পদ্ধতি অনুযায়ী মাসিক হওয়ার পর ৮ নাম্বার দিন থেকে ১৯ নাম্বার দিন পর্যন্ত আপনার ফার্টাল উইন্ডো । তবে মাত্র এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে সাথে অন্য পদ্ধতি মিলিয়ে ব্যবহার করবেন কারণ, সবসময় ৮ নাম্বার দিন থেকে ১৯ নাম্বার দিনেই যে ডিম্বাণু বের হবে এমন নয় এজন্য অন্য পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে হবে। (How many days after your period can you get pregnant)


চতুর্থ পদ্ধতি

ক্যালেন্ডার মেথড:  একটু কষ্ট করে আপনাদেরকে হিসাবটা করতে হবে। তবে ভালো কাজ করে এ পদ্ধতি।  পদ্ধতিটা হল ক্যালেন্ডারে তারিখ হিসাব রাখা প্রথম যেদিন মাসিক শুরু হয় সে তারিখটা ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখবেন মাসিক শেষ হলে সেটা দাগানোর প্রয়োজন নেই। এরপরে আবার যেদিন মাসিক শুরু হবে ক্যালেন্ডারে এসে তারিখটা দাগ দেবেন এই দুইটা তারিখের মধ্যে যতদিন এর পার্থক্য সেটাই আপনার মাসিক এর সাইকেলের এর দৈর্ঘ্য

এভাবে ৬ মাস মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। এর মধ্যে কোনটা লম্বা আর কোনটা সবচেয়ে ছোট, এই সাইকেল দুটি নেবেন।

সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে ১৮ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটি পাবেন সেটি হলো আপনার ফার্টাল উইন্ডো শুরু। সবথেকে লম্বা সাইকেল থেকে ১১ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটি পাবেন সেটি আপনার ফার্টাল উইন্ডোর শেষ  দিন। (What is safe days and unsafe days)

 

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন। বিশেষ করে এই কয়টা পদ্ধতির সমন্বয় করলে বাচ্চা ধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। মনে রাখবেন নিয়মিত সহবাস করলে অর্থাৎ একদিন বা দুদিন পর সহবাস করলে এক বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দম্পতি সফল হন।

তাই তিন চার মাস চেষ্টা করে সফল না হলে ঘাবরাবেন না। এক বছর চেষ্টা করার পরেও সফল না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

আর নারীর বয়স যদি ৩৫ এর বেশী হয় তাহলে ছয় মাস চেষ্টা করার পরে ডাক্তার এর শরণাপন্ন হবেন। (Minimum how many days to get pregnant)

Post a Comment

Do not share any link

Previous Post Next Post