আসসালামু আলাইকুম
এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যা জানতে পারবেন-
- পাইলস কি,
- পাইলস হলে পায়ুপথে কি সমস্যা হয়,
- পাইলস হলে আপনার শরীরে যে প্রভাব পড়তে পারে,
- পাইলস রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা,
- ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম,
- পাইলস হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে,
- পাইলস কোন পর্যায়ে গেলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে,
পাইলস
পায়খানা করার সময় ব্যথা করে সাথে রক্ত যায়, পায়খানার রাস্তায় গোটা গোটা কি যেন হয়েছে। এই রোগের কারণ ও সমস্যার সমাধান পেতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন নিশ্চয় আপনারা উপকৃত হবেন।
পাইলস হলে পায়ুপথে কি সমস্যা হয়
পায়ুপথ বলতে বোঝায় শরীর থেকে যে জায়গা দিয়ে মল বা পায়খানা বের হয়ে যায়। এই পায়ুপথের মুখ সাধারণত বন্ধ থাকে। আমাদের যখন প্রয়োজন হয় আমরা চাপ দিয়ে সে পায়ু পথের মুখ খুলে শরীর থেকে পায়খানা বা মল বের করে দেই। পায়ু পথের মুখ বন্ধ রাখতে সেখানে বেশ কয়েকটি জিনিস একসাথে কাজ করে তার মধ্যে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো অ্যানাল কুশন। এটি তিন দিক থেকে চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে। যদি কোন কারনে তিন দিকের এই কুশন গুলো ফুলে যায় সেগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয় বা নিচে নেমে যায়, পায়ুপথের চারদিকে গোটার মত দেখা যায় তখন সেটিকে আমরা পাইলস বা অর্শ রোগ নামে চিনি। মেডিকেলের ভাষায় এটিকে বলা হয় HEMORRHOIDS।
পাইলস হলে আপনার শরীরে যে প্রভাব পরতে পারে
পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত। সাধারণত টয়লেট পেপার ব্যবহারের পর দেখা যায় সেখানে রক্তের ফোটা লেগে আছে। কমোডে বা প্যানের গায়ে দেখা যায় লাল রক্তের ছোপ। পায়খানা বের হওয়ার শেষপ্রান্তে রাস্তার মুখের কুশন গুলো থেকে রক্ত বের হয় সে রক্ত এখনো তাজা জমাট বাঁধার সুযোগ পায়নি তাই উজ্জ্বল লাল দেখা যায়।
কুশন গুলো ফুলে পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে নরম গোটার মত মনে হয় তখন সাধারণত মলত্যাগের পরে বেরিয়ে আসে আর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় অথবা আঙুল দিয়েও ঢোকাতে হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পাইলস এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আঙুল দিয়েও আর ভেতরে ঢুকানো সম্ভব হয় না।
অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন এই রোগের ব্যথা কেমন হয় সাধারণত, তীব্র ব্যথা হয় না তবে কখনো কখনো তীব্র ব্যথা হতে পারে। যেমন পায়ুপথের বাহিরে যদি কোন গোটা থাকে আঙ্গুল দিয়েও ভিতরে ঢুকানো না যায় সে কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সেজন্য তীব্র ব্যথা হয় সাধারণত এই তীব্র ব্যথা এক থেকে দুই দিনের জন্য হয়। তীব্র ব্যাথা হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
পাইলস হলে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে,মলদ্বার দিয়ে পিচ্ছিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে শ্লেষমার মতো। মলত্যাগ করার পরেও মনে হতে পারে পেট পরিষ্কার হয়নি আবারো মল ত্যাগ করতে হবে।
পাইলস রোগের ওষুধ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
পাইলসের চিকিৎসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা আর এর ওষুধ হচ্ছে ইসবগুলের ভুসি। আমরা সবাই কমবেশি এই ওষুধ চিনি সঠিক ব্যবহার ও তথ্য সম্পর্কে অনেকেই অজানা তাই প্যাকেটের গায়ে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মত পানিতে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন। অনেকে রাতে গুলিয়ে রেখে দেন সকালে খাবার জন্য তবে, এটা সঠিক নিয়ম না তৈরি করে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন সেই সাথে দিনে অন্তত দুই লিটার পানি খাবেন। অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইসুবগুলের ভুসি খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়ার ফলে গলোনালী এবং অন্ত্রের মুখ আটকে যায় আপনি অবশ্যই এই ঝুঁকি নিবেন না।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া যাবেনা যেমন- রাতে খাবারের আগে খাবেন না এতে আপনাদের বৃহদান্ত্রে যে মল তৈরি হয় তার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে অবস্ট্রাকশন। এই অবস্থাটা খুবই জরুরী এমন হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হতে পারে। আপনার পূর্বে এমন হয়ে থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।
- যদি পেটে ব্যথা, বমি ভাব বা বমি হয়।
- পূর্বে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে আপনার শরীরে যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।
- যদি দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথে পায়খানা আটকে গেছে এমন হয়।
- যদি আপনার পায়খানা বা মলত্যাগের সময় হঠাৎ পরিবর্তন হয় এবং সেটি দুই সপ্তাহের বেশি থাকে।
- আগে থেকেই পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায় এবং তার কারণ এখনো জানা না থাকে।
- যদি বৃহদান্তের মাংসপেশী দুর্বল ধীর গতির এমন রোগে ভোগে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে একটা না অনেকদিন ইসুবগুলের ভুসি খাবেন না এটা কিন্তু একটি ওষুধ। ডায়রিয়া সহ এর আরো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তিন দিন ব্যবহারের পর কোষ্ঠকাঠিন্যের কোন পরিবর্তন না আসলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্যথা উপশমের সমাধান
ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন আরো অনেক ধরনের ওষুধ ও মলম আছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। পাইলস হলে কিছু কিছু ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না যেমন- ট্রামাডল। কারণ এই ওষুধটার কমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। বাজারের প্যারাসিটামলের সাথে ট্রামাডাল মেশানো ব্যাথা নাশক ওষুধ পাওয়া যায় এগুলি এড়িয়ে চলবেন।
- আইবুপ্রোফেন যদি আপনার পাইলস থেকে রক্ত যায় কারণ, এই ওষুধটা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ঘরে বসে পাইলসের ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
- ব্যথার জায়গাটি কুসুম গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। একটি পাত্রে কুসুম গরম পানি নিয়ে আস্তে করে বসবেন যাতে কোমর থেকে মলদার পর্যন্ত পানির নিচে থাকে। গর্ভবতী মায়েরা যারা সদ্য বাচ্চা ডেলিভারি করেছেন তাদের যদি পাইলসের সমস্যা থাকে তাদেরকেও কুসুম গরম পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা এই পদ্ধতিটি দিনে দুই থেকে তিনবার করতে পারেন।
- প্যাকেটে কিছু পরিমাণ বরফ নিয়ে তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পাইলসের গোঁটা গুলোর উপরে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
- বিছানায় শুয়ে পা উঁচু করে রাখতে পারেন তাহলে গোটা গুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হবে পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন খাটের পায়ের নিচে কোন কিছু দিয়ে খাটের একপাশ উঁচু করে সেদিকে পা রাখতে পারেন।
- পায়ুপথ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখবেন মলত্যাগ করার পরে খুব জোরে ঘষা দিয়ে মুছবেন না।
- মলত্যাগ করার সময় খুব জোরে চাপ দেওয়া যাবেনা।
- অনেক লম্বা সময় ধরে মলত্যাগ করবেন না টয়লেটে বসে বসে মোবাইল চালানো, বই পড়া, অন্য কাজে মনোনিবেশ করবেন না মোটকথা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় টয়লেটে বসে থাকবেন না।
- পায়খানার চাপ আসলে সেটা আটকে রাখবেন না। পায়খানা আটকে রাখলে দিন দিন সেটা থেকে পানি এগিয়ে শক্ত থাকে তাই চাপ আসলে দেরি না করে মলত্যাগ করে নিবেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার নিশ্চিত করবেন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। এই দুটো কাজ করলে সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলসের লক্ষণ গুলো উপশম হয়। ছয় সপ্তাহ অর্থাৎ দেড় মাস ধরে যদি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার নিশ্চিত করা যায় তাহলে ৯৫ শতাংশ পাইলস রোগীর পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া কমে আসে।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করবেন। ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়াতে হবে এমন না শরীরকে সচল রাখতে সামান্য ছোটখাট ব্যায়ামও করতে পারেন সেটা হাঁটাচলা, বাসার বিভিন্ন কাজকর্ম, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মাধ্যমেও করা যেতে পারে।
- ওজন অতিরিক্ত হলে সেটি কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?
যদি সাত দিন বাসায় চিকিৎসা করেও উন্নতি না দেখেন। যদি বারবার পাইলস হতে থাকে বয়স যদি ৫৫ এর বেশি হয় এবং প্রথমবারের মতো পাইলসের লক্ষণ দেখা দেয়।
কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
-পাইলস থেকে যদি পোজ বের হতে থাকে।
- যদি গায়ে খুব জ্বর আসে কাঁপুনি হয় বা খুব অসুস্থ লাগে।
- অনবরত রক্তক্ষরণ হলে।
- যদি অনেক বেশি রক্ত যায় কোমডের পানি লাল হয় বা বড় বড় রক্তের চাকা যায়।
- খুব তীব্র ব্যথা হলে।
- পায়খানা আলকাতরার মত কালো হলে
আপনার এরকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং দ্রুত হাসপাতালে যাবেন সুস্থ থাকবেন নিরাপদে থাকবেন।
You may also likes
মলদ্বারের ব্যথা কমানোর কয়েকটি সহজ উপায় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে করণীয় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
দুশ্চিন্তা করলে কি কি সমস্যা হয় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
জ্বর ঠোসা হলে করণীয় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ ও সুরক্ষা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
মাসিকের ব্যথা কমাতে ঘরোয়া কয়েকটি সহজ উপায় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)