আসসালামু আলাইকুম
এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যা জানতে পারবেন-
অ্যানাল ফিসার কি,
অ্যানাল ফিসার হওয়ার কারণ,
কিভাবে বুঝবেন আপনার অ্যানাল ফিসার হয়েছে, অ্যানাল ফিসার হলে যে সময় আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে,
পায়খানা করার সময় শরীর ধারের মতো ব্যথা করে এত ব্যথা যে বাথরুমে যাওয়াটাই বিপত্তি। অ্যানাল ফিসার একটি রোগের লক্ষণ। আমরা অনেকেই এটিকে গেজ বলে চিনি। এই রোগের কারণ ও সমস্যার সমাধান পেতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন নিশ্চয় আপনারা উপকৃত হবেন।
অ্যানাল ফিসার
অ্যানাল ফিসার রোগটি পায়ুপথের রোগ। তাই পথ বলতে বোঝায় শরীর থেকে যে মল বা পায়খানা বের হয়ে যায় বিশেষ করে একদম শেষ মাথা। এ পায়ুপথের ভেতর রয়েছে রেকটাম এখানে মল জমা হয় তারপর পায়খানার রাস্তা দিয়ে মল বের হয়ে আসে। পায়খানার রাস্তার সাইটে যে মাংসপেশী থাকে সেখানে চাপ দিয়ে আমরা পায়খানার রাস্তা বন্ধ করতে পারি আর খুলতে পারি। অ্যানাল ফিসার রোগে পায়খানার রাস্তার একটা অংশ চিরে যায় বা ফাটল ধরে। বাইরে থেকে পায়খানার রাস্তায় চিরে যা অংশটুকু দেখা যায়। চামড়া দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার ফলে মল থেকে সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। পায়ুপথের চামড়ায় ফাটল ধরার পর ভেতর থেকে মাংসপেশী টান টান হয়ে যায় ফলে মলদার চেপে যায় বা টাইট হয়ে যায়। এই সময় মলদ্বারের অংশটুকুতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আর রক্ত প্রবাহ কমে গেলে সেটি সেরে উঠতে দেরি হয়। মাঝে মাঝে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগে রূপ নেই আর সেটি হচ্ছে ক্রনিক অ্যানাল ফিসার।
ফিসার হওয়ার কারণ
খুব সাধারণ একটি কারণ হচ্ছে কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য। দেখা যায় পায়খানা শক্ত হলে অনেকে বাথরুমে যেতে চান না তখন মলত্যাগ করতে গেলে কষ্ট হয় তখন পেটের মধ্যে পায়খানা জমে রাখলে দিন দিন সেটা আরো শক্ত হতে থাকে একসময় সেই শক্ত পায়খানা বের করতে গেলে পায়ুপথের চামড়া ছিড়ে যায় ফলে দেখা দেয় অ্যানাল ফিসার। এছাড়াও গর্ভবতী অবস্থায় বিশেষ করে গর্ভধারণের শেষ তিন মাসে নরমাল ডেলিভারির পরে অ্যানাল ফিশার দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ফিশার হওয়ার পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন কখনো কখনো ডায়রিয়ার কারণে ফিসার হতে পারে। আর হতে পারে কিছু অসুখের কারণে এবং কিছু ওষুধের কারণে আবার কোন কারণ ছাড়াই হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যানাল ফিসার হয়েছে?
এই রোগ হলে সাধারণত পায়খানা করার সময় প্রচন্ড ব্যথা হয় ধাঁরালো ব্যথা। অনেক সময় রোগীরাও বলে যে পায়খানা করার সময় পায়ুপথে ভাঙা কাঁচের টুকরো বের হচ্ছে। অ্যানাল ফিসার রোগীদের জন্য এই সময়টাই সবচেয়ে কষ্টদায়ক হয়। ব্যথার কারণে অনেকে বাথরুমে যেতে ভয় পান মলত্যাগ করার পরে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত এ ব্যথা থাকতে পারে। মনে হয় জায়গাটা যেন খুব জ্বলছে। আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত যেতে পারে অথবা পায়খানা করে রক্ত লেগে থাকতে পারে সাধারণত, সামান্য পরিমাণ রক্ত যায়। যেহেতু মোর বের হওয়ার একেবারে শেষ প্রান্তে রক্তক্ষরণ হয় তাই রক্ত তাজা থাকে এবং উজ্জ্বল রংয়ের হয়। উপরের দিকে রপ্ত করানো হলে রক্তের রং গাড় হতো অথবা একেবারে কালচে হয়ে যেত।
অন্যদিকে পায়ুপথের আরেকটি রোগ পাইলস এর লক্ষণ গুলো আরেকটু আলাদা। সেখানে পায়খানা করার সময় নরম গোটার মত দেখা দিতে পারে সেটা সাধারণত মন থেকে পরে বের হয়ে আসে এবং পরে একা একা ভেতরে ঢুকে যায় বা আঙ্গুল দিয়েও উঠানো হতে পারে। মলদ্বারের দিয়ে পিচ্ছিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে শ্লেষমার মতো অ্যানাল ফিশারে সাধারণত এমনটা দেখা যায় না অপরদিকে পাইলসের সাধারণত এমন তীব্র ব্যথা হয় না। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা হতে পারে অপরদিকে অ্যানাল ফিশারের রোগী প্রত্যেকবার মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করে। পাইলস এবং অ্যানাল ফিসার দুটি রোগের কারণে মল দরবারে চুলকানি হতে পারে এবং উজ্জ্বল লাল রক্ত যেতে পারে।
অ্যানাল ফিসার রোগ হলে আপনি যেভাবে নিজের যত্ন নিবেন
- পায়খানার চাপ আসলে সেটা আটকে না রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ মল আটকে রাখবেন মল ততই শুকিয়ে যায় আরও সেটি শক্ত হতে থাকে ফলে মলত্যাগ করতে আরো কষ্ট হয় পায়খানা খুব শক্ত হলে অ্যানাল ফিসার সারতেও খুব দেরি হয়। তাই পায়খানা চেপে রাখবেন না যথাসময়ে মল ত্যাগ করবেন।
এখন আপনি মনে করতে পারেন এটি বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন কারণ প্রচুর ব্যথা হয় ব্যথা কমানো নিয়ে পরের কয়টি পয়েন্ট।
- ব্যথা কমানোর জন্য মলত্যাগ করার পরেই একটা পদ্ধতি করতে পারেন গরম পানির সেঁক। একটি পাত্রে কুসুম গরম পানি নিয়ে আস্তে করে বসবেন যাতে কোমর থেকে মলদার পর্যন্ত পানির নিচে থাকে। কুসুম গরম পানি মলদ্বারের মাংসপেশিকে রিলাক্স করতে সাহায্য করতে পারে ফলে আপনি ব্যাথা থেকে নিরাময় পাবেন। মলত্যাগ ছাড়াও এই পদ্ধতিটি দিনে দুই থেকে তিনবার করতে পারেন একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তারা বেশি শাস্তি পেয়েছিলেন।
- ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খেতে পারেন যেমন প্যারাসিটামল সাধারণত ৫ ০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এমন হলে দুইটা ট্যাবলেট একসাথে খাবেন অর্থাৎ ও এক গ্রাম প্যারাসিটামল খাবেন। চার থেকে ছয় ঘন্টা পর পর খেতে পারেন তবে লক্ষ্য রাখবেন দিনে যাতে আটটি ট্যাবলেট অর্থাৎ চার গ্রামের বেশি ট্যাবলেট খাওয়া না হয়। এই হিসাবটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যার ওজন ৫০ কেজির বেশি এমনটা না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- মলত্যাগ করার আগে পায়খানার রাস্তার মুখে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিতে পারেন তাতে ব্যথা কিছুটা উপশম হতে পারে।
- মলত্যাগ করার সময় খুব জোরে চাপ দিবেন না তাতে অ্যানাল ফিসার আরো খারাপ হতে পারে। এখন আমি মনে করতে পারেন জোরে চাপ না দিলে শক্ত পায়খানা কিভাবে বের করব পায়খানা যাতে শক্ত না হয় পরের পয়েন্ট গুলো পড়লে বুঝতে পারবেন।
- অ্যানাল ফিসার সারিয়া তুলতে সব রোগীকেই চেষ্টা করতে হবে পায়খানা যাতে নরম হয় এবং সহজে মলত্যাগ করা যায়। এটি করার সহজ নিয়ম হচ্ছে খাবারে অতিরিক্ত ফাইবার এবং পানি বেশি পরিমাণে খেতে হবে এতে মল নরম থাকবে। ফলমূল শাকসবজি এগুলো হচ্ছে ফাইবার যুক্ত খাবার ডাল গোটা শস্য দানা যেমন লাল চাল লালটা ইত্যাদি খাবার। দিনে অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার খেতে হবে। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ধরে ব্যায়াম করার চেষ্টা করবেন তাহলে শরীর সচল থাকবে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘন্টা মাঝে এই ধরনের ব্যায়ামগুলো করার চেষ্টা করবেন।
- অ্যানাল ফিসারে যেসব রোগের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদেরকে অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। খাবারে ফাইবার খুব বেশি পরিমাণে পানি যোগ করতে হবে এবং সাথে ব্যায়াম করতে হবে ব্যায়াম নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর একটা ব্যবস্থা আপনারা নিয়ে দেখতে পারেন ইসবগুলের ভুষি খাওয়া প্রায় সবাই আপনারা এই ওষুধটা চিনেন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। দু থেকে তিন দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করে এটি খেতে হবে দিনে দুইবার। সকালে বা সন্ধ্যায় খাবার বা নাস্তা খাওয়ার পর। প্যাকেটের গায়ে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী পানিতে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন। অনেকে রাতে গুলিয়ে রেখে দেন সকালে খাবার জন্য এটা সঠিক নিয়ম না তৈরি করে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন সেই সাথে দিনে অন্তত দুই লিটার পানি খাবেন।
-মলদার শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখবেন খুব জোরে ঘষা দিয়ে মুছবেন না এই কাজগুলো ফিসার সারতে সাহায্য করবে এবং ফিশারের যে জটিলতা যেমন পায়ুপথে যে ব্যথা এগুলো থেকে দূরে রাখবে।
এই পদ্ধতি গুলো মেনে চললে প্রায় অর্ধেক রোগীর অ্যানাল ফিসার ভালো হয়ে যায়। বাকিদের আরো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কারো কারো পায়ুপথে বিশেষ কিছু মলম ব্যবহার করে সারিয়ে তুলতে হয় আর কিছু কিছু রোগীর অপারেশন প্রয়োজন হয়। খুব জটিল অপারেশন না সাধারণত রোগী সেদিনই বাড়ি যেতে পারে।
You may also likes
টয়লেট নরম করতে কিছু সমাধান (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
রোজা রাখার সাতটি চমৎকার উপকারিতা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর লক্ষণ এবং সুরক্ষা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
ওজন কমানোর সহজ আটটি পদ্ধতি (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
সাদা ভাত স্বাস্থ্যের কি উপকারী (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
উকুন দূর করার ঘরোয়া তিনটি সহজ উপায় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
বেকার সমস্যায় বাংলাদেশ ও চাকরি লাভের উপায় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম কি (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?
যদি মনে হয় আপনার অ্যানাল ফিসার হয়েছে তাহলে একজন চিকিৎসার পরামর্শ নিবেন কবিরাজি বা ভেষজ ওষুধ নিয়ে নিজেদের ক্ষতি করবেন না। যদি মনে করেন আপনারা ফিশার হয়েছে তাহলে ওপরে নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন নিশ্চয়ই আপনার উপকার হবে। আর চিকিৎসক যে ওষুধ আর পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো মেনে চলবেন।