হার্ট অ্যাটাকে করণীয় | what to do in heart attack

 আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যা জানতে পারবেন-
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ কি
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কি,
কিভাবে বুঝবেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে,
কার্ডিয়াক এরেস্ট হওয়ার কমন কারণ,
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর প্রাথমিক চিকিৎসা কী

হার্ট অ্যাটাকে করণীয় | what to do in heart attack

হার্ট অ্যাটাক 

হার্ট অ্যাটাক এমন একটি রোগ যা মানুষকে অল্পসময়ের মধ্যে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এটির মাধ্যমে আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক হার্টে ব্লকের সৃষ্টি করে তার কারণে শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

আপনার চোখের সামনে হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ল তার কারণ হতে পারে
১) কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
২) অন্য কোন অসুস্থতা
যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাহলে মানুষটি আপনার চোখের সামনে কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যাবে। তবে আপনি যদি প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন তাহলে মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত।
কিভাবে বুঝবেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে অন্য অসুস্থতা নয়?

হার্ট অ্যাটাকে করণীয় | what to do in heart attack

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

আমাদের হার্টে একটি ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম রয়েছে যার কারণে হার্ট সব সময় বীট করতে থাকে আর সারা শরীরে রক্ত পাম্প করে। যখন ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে কোন গুরুতর সমস্যা দেখা দেয় এবং শরীরের হার্ট রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে সেটিকে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার কমন কারণ

- হার্ট অ্যাটাক।
- হার্টে বংশগত সমস্যা ইত্যাদি।


উদাহরণ: মনে করুন, আপনার কলিগ মোস্তফা হঠাৎ করে আপনার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। সে জন্মগতভাবে হার্টে কোন একটি সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু,ওই সমস্যা সম্পর্কে সে জানতো না তার অন্যকোন সমস্যাও হয়নি। হঠাৎ করে আজকে তার বংশগত সমস্যার কারণে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে সমস্যা সৃষ্টি হলো নানা জায়গায় ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম ফায়ার করছে ফলে তার হার্ট স্বাভাবিকভাবে সংকোচন প্রসারণ না করে কাঁপতে শুরু করেছে। এমন কাঁপতে থাকলে হার্ট শরীরে রক্ত পাম্প করতে পারে না ফলে ব্রেইনেও রক্ত যাচ্ছে না শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে এসেছে মোস্তফা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। এই সময় যে মস্তফা পড়ে গেছে এটা তার মনে থাকবে না কারণ তার ব্রেইনে রক্ত, অক্সিজেন কোনটাই যাচ্ছে না এর ফলে ব্রেনের কিছু কোষ মারা যেতে শুরু করেছে।

এই অবস্থায় আপনাকে যা করতে হবে মোস্তফাকে বাঁচানোর জন্য ওর হার্টের কাজটা নিজের হাতে তুলে নিবেন তার বুকে চাপ দিয়ে ব্রেইনে রক্ত চলাচল করতে থাকবে যাতে তার ব্রেন ভালো থাকে অনেকটা কোষ মরে না যায়। আপনি এই কাজটি করলে মোস্তফার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে দুই থেকে তিন গুণ। এটাকে বলে Cardiopulmonary resuscitation বা CPR

যখন দেখবেন মস্তফা পড়ে গেল তখন আপনাকে খুব দ্রুত তিনটা কাজ করতে হবে
১) জ্ঞান আছে কিনা চেক করতে হবে
২) সাহায্যের জন্য অন্যদের ডাকতে হবে এবং বলুন ৯৯৯ নম্বরে কল করতে অথবা Defibrillator আনতে
৩) শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করবেন

যদি মোস্তফা আপনার কথা সাড়া না দেয়, শ্বাস প্রশ্বাস যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে, ধরে নিবেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে এখুনি সিপিআর শুরু করতে হবে।

You may also likes 







সিপিআর দেওয়ার নিয়ম

মোস্তফার বাম পাশে হাঁটু গেড়ে বসবেন এবং বুকের ঠিক মাঝখানে আপনার এক হাতের তালুর নিচের অংশ রাখবেন আরেক হাতর তালু তার উপর বসাবেন তারপর আঙুলগুলো একটা আরেকটার ভিতরে ঢুকাবেন তারপর মোস্তফার বুকের উপর ঝুঁকে আসবেন যাতে আপনার কাঁধ এবং হাতের তালু একটা সোজা লাইন বরাবর থাকে তারপর মোস্তফার বুকে এমনভাবে চাপ দিবেন অন্তত ৫ সেন্টিমিটার ডেবে যায়। প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার এবং খুব দ্রুত চাপ দিতে হবে এভাবে চাপ দিয়ে আপনি মোস্তফা ব্রেইনে এবং শরীরে রক্ত পাম্প করছেন। দুই চাপের মধ্যবর্তী সময় খেয়াল রাখবেন মোস্তফার বুক আবার পুরোপুরি যেন আগের অবস্থানে ফিরে আসে এতে রক্ত চলাচল করবে। ৩০ বার বুকে চাপ দেওয়ার পর ২টি রেসকিউ ব্রেথ করতে হয়। রেসকিউ ব্রেথ যেভাবে দিতে হবে এক হাতে রোগীর মাথা নিচু করে আরেক হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে থুতনি উঁচু করে যে হাত মাথায় সে হাত দিয়ে রোগীর নাক বন্ধ করে মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে এক সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছেড়ে রোগীর ফুসফুসে বাতাস পৌঁছাতে হয়। তবে অনেকেই রেসকিউ ব্রেথ দিতে সাছন্দ বোধ করেনা না পারলে দরকার নাই রেস্কিউব ব্রেথ দিতে না পারলে দয়া করে সিপিআর বন্ধ করবেন না এই কাজটা মোস্তফার জীবন বাঁচাতে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

হার্ট অ্যাটাকে করণীয় | what to do in heart attack

ডিফিব্রিলেটরের ব্যবহার

এটির মাধ্যমে রোগীকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। হার্ট শুধু কাঁপছে পাম্প করতে পারছে না ইলেকট্রিক শক দিয়ে হার্টের এলোমেলো কাঁপুনি বন্ধ করা হয়। হার্ট যদি তখনো ভালো থাকে তাহলে, হার্টের ইলেকট্রিক সিস্টেম আবার ভালোভাবে বিট করা শুরু করতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক প্লেসে যেমন শপিংমলে, হোটেলে, স্কুলে এই যন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেওয়া হয় যাতে করে প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে সাধারণত এই যন্ত্র থাকে না বা পাওয়া যায় না আপনারা যারা এই পোস্টটি পড়ছেন তারা অবশ্যই একার পক্ষে সম্ভব না হলে কয়েকজন বন্ধু মিলে এই যন্ত্রটি কিনে রাখতে পারেন যেন প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবহার করা যায়। ডিফিব্রিলেটর হাতের কাছে না থাকলে সিপিআর চালাতে থাকবে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে সাধারণত ডিফিব্রিলেটর ব্যবহার করা লাগেনা সিপিআরই যথেষ্ট।

সিপিআর চালিয়ে যাওয়ার সময়

যতক্ষণ পর্যন্ত জরুরি সেবা না আসে অথবা রোগীর জ্ঞান ফিরে না আসে। যতক্ষণ না সে চোখ খুলছে, কাশি দিচ্ছে কথা বলছে বা শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে। আর এসব কিছুর আগে দেখে নিবেন জায়গাটা আপনার জন্য নিরাপদ কিনা। রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ করে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে একটা দুর্ঘটনা আপনি না দেখে হঠাৎ করে সেখানে ছুটে গেলে একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই নিজের নিরাপত্তা থাকে তাহলে অবশ্যই শিখে নিবেন। স্কুলগুলোতে শেখাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো হতো আশা করি এরকম বিপদে আপনাদের যেন কখনো পড়তে না হয় যদি বিপদ আসেও তাহলে এই শিক্ষণীয় তথ্যগুলো জেনে রাখবেন নিশ্চয়ই আপনার কাজে আসবে। যতটুকু মনে থাকে ততটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন আপনারই চেষ্টাতে হয়তো একটি জীবন বেঁচে যেতে পারে।

Related search 












Post a Comment

Do not share any link

Previous Post Next Post