আসসালামু আলাইকুম
এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যে জানতে পারবে
- উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ
- উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সময়
- লক্ষণ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ
- লক্ষণ সহ উচ্চ রক্তচাপ
- তেঁতুল উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে কি না
যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন তাদের রক্তচাপ যদি দ্রুত বেড়ে যায় তাহলে সেটি বিপজ্জনক হতে পারে।
এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো কি কি ভুলের কারণে উচ্চ রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায় আর বেড়ে গেলে করণীয়।
উচ্চ রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণ সমূহ
উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো চিকিৎসা না হওয়া বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া।
যদি রোগী না জানে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে
এটাও কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব? হ্যাঁ। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপের অর্ধেক রোগী জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। কারণ এই রোগে সাধারণত কোন লক্ষণ দেখা যায় না একমাত্র ব্লাড প্রেসার মাপলেই বোঝা যায় কার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গত এক বছরে যারা ব্লাড প্রেশার মাপেন নি তারা তো জানতে পারবে না যে তাদের এই রোগ আছে কিনা। না জানতে পারলে চিকিৎসাও হবে না জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তনও আসে না এভাবেই রক্তচাপ দিন দিন বেড়ে যেতে পারে।
ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শে ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। আপাতদৃষ্টিতে শরীরে কোন অসুখ দেখা যায় না তবে উচ্চ রক্তচাপ নিরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতি করতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্তনালীর ক্ষতি হয় একটা সাধারণ ব্যাপার হঠাৎ রক্তনালী একটি রাতে উচ্চ রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না।
ব্লাড প্রেশারের ওষুধ কমিয়ে খাওয়া
ডাক্তার হয়তো আপনাকে দুইটা ওষুধ দিয়েছে আর আপনি একটা খাচ্ছেন অর্থাৎ ডাক্তার বলেছে দুইবেলা ওষুধ খেতে আর আপনি এক বেলা করে খাচ্ছেন কারণ জিজ্ঞেস করলে কোন কোন রোগী বলে আমাদের শরীরে তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। এরকম করার কারণে আপনার উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে সেটা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সারাজীবন একই পরিমাণে খেতে হবে এমন নয় অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যায়। একেবারে বন্ধও করা যেতে পারে তবে আপনার শরীরের প্রতিটি বিষয় লক্ষ্য রেখে যেমন শরীরে কি কি রোগ আছে এসব বিবেচনা করে তারপরে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এই বিবেচনায় নিজে না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে তা না হলে বিপদ ঘটতে পারে।
ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া
রক্তচাপের ওষুধ সাধারণত প্রতিদিন খেতে হয় আর উচ্চ রক্তচাপ হলে রোগী ব্যথা বা অস্বস্তিতে থাকেন না ওষুধ খেতে ভুলে যায়।
এগুলো ছাড়াও প্রেশার বেড়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণ আছে যেমন মানসিক চাপ, নির্দিষ্ট কিছু রোগ যেমন কিডনি বা থাইরয়েডের রোগ গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লামসিয়া বা এক্লামসিয়া রোগ। বিভিন্ন ঔষধ যেমন স্টেরয়েড, ভেষজ ওষুধ, ব্যথানাশক আইবুপ্রফেন ইত্যাদি।
প্রেশার হঠাৎ বেড়ে গেলে করণীয়
আপনি প্রেশার মেপে দেখলেন উপরেরটা ১৮০ নিচেরটা ১২০ এর বেশি এরপর আপনার প্রথম কাজ হল ঘাবড়ে না যাওয়া। পাঁচ মিনিট শান্ত হয়ে বসুন তারপর আবার প্রেশার মাপুন দ্বিতীয়বার মাপার পরও যদি রক্তচাপ বেশি আসে তাহলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে আর দেরি করা যাবে না।
যাদের রক্তচাপ উচ্চ পর্যায়ে কিন্তু আর কোন লক্ষণ নাই এরকম হলে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে যে এত প্রেশার কেন হল প্রেশারের ওষুধ ঠিকমত কাজ করছে কিনা নাকি শরীরে আরও অন্য কোন অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি শুক্র কাজ এ জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞান অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুইটা কাজ করতে হবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর প্রেশার মেপে কাগজে লিখে রাখবেন আর সাথে মাপার সময়টাও লিখে রাখবেন। দিনে পরপর কয়েকবার প্রেশার মাপা সংখ্যা দেখলে ডাক্তার বুঝতে পারবে ব্লাড প্রেশারের অবস্থা কেমন।
আপনি ব্লাড প্রেশারে কি কি ওষুধ খাচ্ছেন কি পরিমানে এবং কোন সময় খান দিনে কোন বেলায় ওষুধ খেতে মিস করেছেন সেসব কাগজপত্র একত্র করবেন। অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটা হোমিওপ্যাথি হোক আর ভেষজ ওষুধও হোক সেগুলোর সাথে করে নিয়ে যাবেন। এ দুটি তথ্য পেলে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে আপনার শরীরে কি হচ্ছে তা বোঝা এবং তিনি প্রকৃত অবস্থা জেনেশুনে সুনিশ্চিত মতামত দিতে পারবেন। আপনার দেয়া তথ্য গুলো দেখে একজন ডাক্তার অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা সহ ওষুধ পাল্টে দিয়ে নতুন ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন। যদি মানসিক চাপ বেশি থাকে তাহলে সেটা চিকিৎসা দিবেন এবং এক সপ্তাহ পর তিনি আবার দেখবেন আপনার প্রেশিরের কি অবস্থা। ডাক্তারের প্রধান লক্ষ্য থাকবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ ১৮০ বাই ১২০ এর নিচে নামানো। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি অন্তত মাসে একবার আপনাকে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং লক্ষ্যে পৌঁছে যাবার পর তিন থেকে ছয় মাসে একবার আপনাকে দেখবেন।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং সাথে আরও লক্ষণ আছে তাদের জন্য লক্ষণগুলো হচ্ছে :-
-মাথা ব্যথা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- বমি ভাব,বমি
- কনফিউশন বা আবোল তাবোল বলা কোন বিষয় ভুলে যাওয়া
- ঝিমিয়ে নিয়ে পড়া
- অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়া
- খিঁচুনি
-মুখ বেঁকে যাওয়া
- হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া
- মুখের কথা জটলা লাগা
- পিঠ বা পেটে ব্যথা
- অস্থির লাগা
- বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
এরকম হলে নিজেরা ওষুধ খেয়ে প্রেশার কমানোর চেষ্টা করবেন না কারন এই অবস্থায় খুব সতর্কতার সাথে প্রেশার কমাতে হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রেশার কমালে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরকম রোগী যদি স্ট্রোক করে থাকে তাহলে সাথে সাথে প্রেশার কমানো হয় না এতে ব্রেনে রক্ত চলাচল আরো কমে যেতে পারে। আমার কিছু ক্ষেত্রে প্রেশার খুব দ্রুত নামিয়ে আনতে হতে পারে যেমন রক্তনালী ছিঁড়ে যায় সাধারণত শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানো হয় মুখে ওষুধ দেওয়া হয় না।
অনেকে প্রশ্ন করে টক বা তেঁতুল খেলে সাথে সাথে প্রেশার কমবে? উত্তর হলো না। তাৎক্ষণিকভাবে প্রেশার কমানোর এটা সঠিক উপায় নয় বরং তেতুল খুঁজতে গিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয় সেটা রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে তেঁতুল খেলে উপকার আছে কারন তেঁতুল একটা ফল। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের দিনে চার থেকে পাঁচটা ফল খেতে বলা হয়। কারণ ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তেতুলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে অন্যান্য ফল যেমন খেজুর, কলা, কমলা, আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে তেঁতুলই খেতে হবে এমন কোন কথা নেই।
You may also likes
ওজন কমানোর সহজ আটটি পদ্ধতি (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের কয়েকটি পরীক্ষা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
সাদা ভাত স্বাস্থ্যের কি উপকারী (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
গরমের কারণে স্টোক বিপদের চিহ্ন ও করণীয় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)