আসসালামু আলাইকুম
এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যা জানতে পারবেন-
- দাঁতের মাড়ি ফোলার কারণ ও প্রতিকার,
- স্কেলিং এর গুরুত্ব,
- দাঁত ও মাড়ির যত্নে গরম পানি ও লবণ,
- মাড়ির কালচে ভাব দূর করার উপায়,
- মাড়ি কালচে হওয়ার কারণ,
- অ্যাডিসন রোগ কি,
দাঁত
মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মত দাঁত ও গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের মুখের সৌন্দর্য বর্ধন করে দাঁত । একজন মানুষের মুখের শ্রী নষ্ট হয়ে যায় দাঁত না থাকার কারণে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত দাঁতের যত্ন নেওয়া। সঠিক নিয়মে দুই বেলা দাঁত মাঁজা।
দাঁতের মাড়ি ফোলার কারণ
দাঁতের মাড়ি ফোলার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মাড়ির প্রদাহ। আরও অনেক কারণ রয়েছে যেমন- নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না রাখা, দাঁতের ফাঁকে খাবার জমা ও মাড়ির ইনফেকশন। দুই দাঁতের মাঝখানে খাবার জমে থাকার ফলেও মাড়ি ফুলতে পারে। দাঁতের গোড়াতে মাড়ির চারপাশে প্লাগ জমা হয়। এই প্লাগ দীর্ঘদিন থাকার ফলে দাঁতের মাড়ির নিচে যে হাড় থাকে সেই হাড়কে ক্ষয় করতে থাকে। ধীরে ধীরে সেখানে একটি পকেট হয় পকেট হয়ে মাড়ি ফুলতে থাকে মাড়িতে দুর্গন্ধ হয় এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।
মাড়ি ফোলা রোগ নিরাময়ে স্কেলিং এর গুরুত্ব
চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁত ভালো রাখার চেয়ে নিজেরা সঠিক নিয়মে যদি পরিচর্যা করি তাহলে আমাদের দাঁতে কিংবা মাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিবে না। আমরা দুই বেলা দাঁত মাজব রাতে ঘুমানোর পূর্বে এবং সকালে নাস্তা করে। আমরা প্রতিনিয়ত ছয় মাস পর পর একজন ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে তার দেখাবো এবং স্কেলিং করাব। স্কেলিং করালে প্লাগ ক্যালকুলাস জমবে না আমাদের মাড়ি সুস্থ থাকবে।
আমরা অনেকেই ধারণা করি যে, স্কেলিং করলে দাঁত দুর্বল হয়ে যায়, দাঁতের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা। বরং, মুখ ও দাঁতের মাড়ির সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত কেলিন করা খুবই জরুরী। স্কেলিং করার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে আমাদের দাঁতের মধ্যে লুকায়িত কিছু ক্যাভিটি থাকে দুই দাঁতে মাঝখানে কিছু এগুলো আমরা খালি চোখে বা বাইরে থেকে দেখতে পারি না। স্কেলিং করতে গেলে চিকিৎসকরা অবশ্যই সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারবে যে সেখানে ক্যাভিটি আছে বা কোন প্রকার প্রদাহ আছে সেগুলো নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে পারবেন।
মাড়ির প্রদাহ দূর করতে গরম পানি ও লবণ
হালকা গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ দিয়ে কুলকুচি করা দাঁত ও মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। এ পদ্ধতিটি নিয়মিত এবং সঠিকভাবে করলে আমাদের দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তবে কারো যদি খুব বেশি ক্যালকুলাস অথবা বন লস থেকে থাকে তার চিকিৎসার পরে স্কেলিং শেষ করার পর নিয়মিত গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলকুচি করা তার জন্য সহায়ক। তবে যদি তার মাড়িতে সমস্যা থেকেই যায় এবং লবণ গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে এটি কিন্তু তার সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান দিবে না।
প্রিয় অথবা কাছের মানুষের মুখে যদি দুর্গন্ধ হয় সেটির ৫০% ক্যালকুলাস ও মুখ গহ্বরের কারণ। যদি আসে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করে মুখে অনেক বেশি ক্যালকুলাস বা প্লাগ থাকলে, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। এগুলো হলে সর্বপ্রথম তাকে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বাড়ির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার পরে ও যদি তার দাঁত ও মাড়ি ফোলা এবং রক্ত পড়া সমস্যা থাকে তাহলে অন্যান্য বিশেষজ্ঞ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তাদের সাথে পরামর্শ করবেন।
দাঁতের মাড়ির কালচে দাগ
মাড়ির রঙ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন ওষুধ সেবন, ধূমপান এমনকি জীবনধারার ভিন্নতার কারণে মাড়ির রঙ বাদামী থেকে কালচে রঙের হতে পারে। মাড়ির যে টিস্যু থাকে সেগুলো চারপাশ থেকে দাঁতকে শক্তভাবে ধরে রাখে। সাধারণত মাড়ির রং লালচে অথবা গোলাপী হয়ে থাকে কিন্তু, কখনো যদি মাড়ির রঙ বাদামি অথবা কালচে হয় তাহলে সেটি নির্দেশ করে শরীরের অন্তর্নিহিত কোনো অসুস্থতা বা রোগের কারণ।
You may also likes
ধূমপান থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়ার উপায় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
নিদ্রাহীনতার ১৩ টি কারণ ও চিকিৎসা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
ব্রণের দাগ ও গর্ত দূর করতে ঘরোয়া এবং আধুনিক চিকিৎসা (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
দুশ্চিন্তা করলে কি কি সমস্যা হয় (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)
মাড়ি কালচে হওয়ার কারণ
দাঁতের মেলানিন এর পরিমাণ যদি বেশি থাকে তাহলে, ত্বক, চুল ও চোখ যদি গাঢ় হয় এর কারণেও মাড়ি বাদামী বা কালচে ভাব হতে পারে। ধূমপান অন্যতম একটি কারণ। এর মাধ্যমেও মাড়ির রঙ বীবর্ণ হতে পারে। ম্যালোনোসাইড নামক একটি কোষ যা দেহে মেলানিন তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তামাকের নিকোটিনের প্রভাবে ম্যালোনোসাইড অতিরিক্ত পরিমাণে ম্যালানিন তৈরি করে যার ফলে মাড়ি বাদামী বা কালচে দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় গালের বা ঠোঁটের ভেতরে ও রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। আলসারেটিভ জিনজারভেটিস বা প্রদাহযুক্ত মাড়ি মাড়ির একটি সংক্রমণ। এর ফলে মাড়িতে ব্যথা, জ্বর অথবা দুর্গন্ধ যুক্ত মাড়ি হতে পারে। যার কারণে মাড়ির উপরে টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে একটি স্তর তৈরি করে যার ফলে মাড়ি বাদামী বা কালচে হতে পারে।
অ্যাডিসন রোগ
আমাদের অ্যাডিন্যাল গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরি হয়। অ্যাডিসন রোগ হলে এই হরমোন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এর কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন ভোজন হ্রাস, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত বোধ করা ও ক্ষুধা মন্দা। অ্যাডিসন রোগ বাড়ার সাথে সাথে মাড়ি কালচে ও বাদামী রং ধারণ করে। এছাড়াও ঠোঁটের ভেতরে কালচে রং দেখা দিতে পারে যাকে হাইপার পিগমেন্টেশন বলে। অসুস্থকর মুখ গহ্বরের কারণে মাড়ির রঙের পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মাড়ির রঙ বাদামি হয় কারণ, এসময় ব্যাকটেরিয়া প্রবাহ অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায় ফলে মাড়ি বাদামী ও কালচে রঙের হয়।
মাড়ির বাদামী ও কালচে ভাব দূর করার আধুনিক চিকিৎসা
এই সমস্যাটি দূর করতে আধুনিক ডেন্টিস্টিটে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি সংযোজন হয়েছে। আপনি হয়ত দুশ্চিন্তায় পড়তে পারেন উপরে যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার একটি কারণে আপনার মুখে হয়ত কালচে ভাব অথবা মাড়ি ফুলে ব্যথা হতে পারে।
এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই আপনার নিকটস্থ একজন BMDC রেজিস্ট্রারড্ প্রাপ্ত ডেন্টাল সার্জনের মাধ্যমে চিকিৎসা করাবেন। তিনি আপনার মুখ গহ্বরের পর্যালোচনা করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।